,

ময়মনসিংহে ছোট ভাইদের ভিটা নিশ্চিহ্ন করল বড় ভাই

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি: জমি নিয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে বিরোধ। কিন্তু কোনোভাবেই ছোট ভাইদের ভিটা ছাড়া করতে না পেরে এক ভাইকে পিটিয়ে দুই হাত ভেঙে দেওয়া হয়। এ নিয়ে মামলা করলে পাল্টা মাছ চুরির মামলা করা হয়। এতে ছোট ভাইয়েরা বাড়ি ছাড়া হওয়ার সুযোগে ভিটাকে নিশ্চি?হ্ন করে দেওয়া হয়। শূন্য ভিটায় কলাগাছের পাতার বেষ্টনী দিয়ে ত্রিপল টানিয়ে বসবাস শুরু করছেন অসহায় দুই ভাই। ভাইয়ে ভাইয়ে বিরোধে এমন ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে।

তারুন্দিয়া ইউনিয়নের পলাশকান্দা গ্রামের জৈমত আলীর তিন ছেলে- আবদুল জলিল, রইছ উদ্দিন ও রফিকুল ইসলাম। বড় ভাই আবদুল জলিলের বিরুদ্ধে ছোট দুই ভাই রইছ উদ্দিন ও রফিকুল ইসলামকে অত্যাচার-নির্যাতন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভাইদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হওয়ায় পৈতৃক বাড়ি ছেড়ে রইছ উদ্দিন ও রফিকুল ইসলাম কেইল্লা বিলের মাঝখানে গিয়ে বসতি গড়েন ২০০১ সালের দিকে। কিন্তু ওই জমির মালিক জলিল নিজে বলে দাবি করলে শুরু হয় বিরোধ। দীর্ঘদিন ধরে চলা বিরোধের জের ধরে ৫ জুলাই ভারতী বাজার থেকে বাড়িতে ফেরার পথে আক্রমণ চালানো হয় রইছ উদ্দিনের ওপর। পিটিয়ে রইছ উদ্দিনের দুটি হাত ভেঙে দেওয়া হয়। ওই সময় স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে রইছ উদ্দিনকে ময়মনসিংহ হাসপাতালে ভর্তি করে।

ওই ঘটনায় রইছ উদ্দিনের ছোট ভাই রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ৮ জুলাই বড় ভাই জলিল ও তার ছেলেদের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা করেন। ৫ আগস্ট রইছ উদ্দিনের বাড়ি লাগোয়া জলিলের পুকুর থেকে মাছ চুরি করে নিয়ে গেছে এমন অভিযোগ করে জলিল। ছোট দুই ভাই, ভাইদের স্ত্রী ও সন্তানদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে ৬ আগস্ট ঈশ্বরগঞ্জ থানায় মামলা নথিভুক্ত হয়। থানায় মামলা হয়েছে জেনে রইছ উদ্দিন ও রফিক তাদের পরিবারের লোকজন নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যান।

ওই সুযোগে শুরু হয় তাদের ভিটা শূন্য করার কার্যক্রম। বাড়ির পাঁচটি ঘর, আসবাবপত্র, গৃহস্থালির জিনিসপত্র, গরু-ছাগল যাবতীয় জিনিসপত্র নিয়ে যায় বড় ভাই। বড় ভাইয়ের এমন কাণ্ডে বাড়ি ছাড়া হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন রইছ উদ্দিন ও রফিকুল ইসলাম। পরে রইছ উদ্দিন বাদী হয়ে ২১ আগস্ট ময়মনসিংহ আদালতে একটি মামলা করেন। ওই ঘটনার সত্যতা যাচাই করে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য আদালতের নির্দেশ পেয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানার এসআই আবদুল করিম ২৫ আগস্ট আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠান।

প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, মামলায় অভিযুক্ত আবদুল জলিল, তার ছেলে ফজলুল হক, মানিক মিয়া ওরফে কালার বাপ, সিরাজুল ইসলাম, মেয়ে হেলেনা খাতুন ও স্ত্রী ফিরোজা খাতুন গত ৮ আগস্ট বাদী রইছ উদ্দিনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তার পূত্রবধূকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে বাড়িঘর তছনছ করে। আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ সত্য প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আদালতে বিচারের নিমিত্তে প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়।

দীর্ঘদিন মানুষের বাড়িতে দিন যাপন শেষে রইছ উদ্দিন ও রফিকুল ইসলাম প্রাণের ভয় মাথায় নিয়ে নিজের ভিটায় ফিরেছেন। গত মঙ্গলবার

গ্রামের কয়েকজনের সহায়তায় কলাগাছের পাতার বেষ্টনী দিয়ে তাতে ত্রিপল টানিয়ে শূন্য ভিটায় বসবাস শুরু করছেন।

রইছ উদ্দিন জানান, তার বড় ভাই জলিল তার বাবা জীবিত থাকতে কৌশলে কিছু জমি লিখে নিয়ে যায়। এ নিয়ে বিরোধ তৈরি হলে বড় ভাইয়ের অত্যাচারে তারা দুই ভাই বাড়ি ছেড়ে বিলের পারে বসতি গড়েন। বড় ভাই জমি লিখে নেওয়ায় তার বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় জলিলের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলেন। তারুন্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হালিম বলেন, ভাইয়ে ভাইয়ে চলা বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। এক ভাই দুই ভাইয়ের বসতবাড়ি সব নিশ্চি?হ্ন করে দিয়েছে।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার এসআই আবদুল করিম বলেন, জমি নিয়ে বিরোধে ভাইয়ে ভাইয়ে বিরোধ। বিরোধে এক ভাই দুই ভাইয়ের ভিটা নিশ্চি?হ্ন করে দিয়েছে। আদালতে মামলা করলে তাদের কাছে প্রতিবেদন চাওয়া হলে তারা প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন।

ময়মনসিংহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গৌরীপুর সার্কেল) সাখের হোসেন সিদ্দিকী বলেন, ঘটনাটি বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। সরেজমিন তদন্ত করে বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর